আরিফুল ইসলাম
আমার নাম আরিফুল ইসলাম। পেশায় গ্রাফিক ডিজাইন প্রশিক্ষক। বর্তমানে আর্কেডিয়া আইটিতে হেড অফ গ্রাফিক ডিজাইন হিসেবে আছি।প্রায় ৯ বছরের অভিজ্ঞতা।
লোগো ডিজাইন করবেন?
আপনাকে স্বাগতম।
খুব কি সহজ মনে হয় লোগো ডিজাইন করা?
দেখতে তো কতো সাধারণ মনে হয়, তাহলে ডিজাইন করা ও কি অনেক সহজ?
বিশ্বাস করেন লোগো ডিজাইন করা একদম এ সহজ ব্যাপার না।কিছু শেপ, কালার ফন্ট দিয়ে একটা ডিজাইন করলে ই সেটা লোগো ডিজাইন হয়ে যাবে না।লোগো একটা ব্র্যান্ড এর পরিচয়, লোগোর মাধ্যমে দর্শক বুঝবে সেই কোম্পানির কাজ কি, সে কোম্পানি কি করে।তাই লোগো ডিজাইন এ টেকনিক্যাল দক্ষতার পাশাপাশি আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে, কি রকম লোগো বানাবেন সেটা নিয়ে প্ল্যান করতে হবে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী এগুতে হবে মোট কথা হচ্ছে আপনি কম্পিউটার টেবিল এ বস্লেন আর কিছু শেপ, টেক্সট আর রঙ দিয়ে লোগো করে ফেললেন ব্যাপারটা একদম এ এরকম না।সবার আগে আপনাকে প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে যেমন
লোগো দেখুন, শিখুন
অনুপ্রেরনা যেকোনো জায়গা থেকে যে কোন সময় আসতে পারে, আর লোগো ডিজাইন এর ক্ষেত্রে যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।আপনি জানেন না যারা অভিজ্ঞ তাদের লোগো কেমন হয় আপনি হয়তো দেখেন ই নাই তারা কিরকম ডিজাইন করে তাহলে আপনি ভাল লোগো ডিজাইন করতে পারবেন না।তাই আপনাকে লোগো দেখতে হবে, ভাল লোগো, খারাপ লোগো সব দেখতে হবে তাহলে ই আপনি ধারনা পাবেন কিভাবে লোগো ডিজাইন করতে হয়।সে জন্য ইন্টারনেট এ কিছু সাইট আছে সেখানে গেলে আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর লোগো দেখতে পাবেন যা আপনার উপকার এ আসবে।যেমন
এছাড়া ও আপনি কিছু ওয়েবসাইট দেখতে পারেন যেগুলি লোগো ডিজাইন এর পাশাপাশি অন্যান্য ডিজাইন ও আপনি দেখতে পাবেন তাহলে আপনি গ্রাপজিক ডিজাইন সম্পর্কে সুন্দর একটা ধারনা পাবেন যেমন
আপনি এখান থেকে বিভিন্ন ভাবে আইডিয়া নিতে পারেন, গুগল আছে সেখান থেকে আইডিয়া নিতে পারেন।সাধারণ ভাবে আইডিয়ার জন্য আপনি সব ধরন এর লোগো ডিজাইন দেখেন আবার আপনি যখন নির্দিষ্ট কোম্পানির জন্য লোগো ডিজাইন করবেন যেমন আপনি রিয়াল এস্টেট কোম্পানির জন্য লোগো তৈরি করবেন একটু দেখে নিন সার্চ করে রিয়াল এস্টেট কোম্পানির লোগোগুলি কি রকম হয়, কোন ভাবে ই নকল করা যাবে না শুধু অনুপ্রেরনা।
লোগোর কিছু বেসিক নিয়ম মেনে চলুন
একটি সুন্দর লোগো সব সময় খুব সিম্পল হতে হবে এবং সেখানে একটা মেসেজ থাকতে হবে।সেই কোম্পানির কি করতে চায়, কি ধরনের কোম্পানি সেটা একটা সিম্বল এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হবে।সেগুলি করতে হলে আপনাকে লোগো ডিজাইন এর কিছু বেসিক নিয়ম আছে সেগুলি জানতে হবে, নিচে দিচ্ছি
লোগো অবশ্যই সিম্পল হতে হবে – লোগো যদি সিম্পল হয় তাহলে মানুষ সেটা দেখে সহজে বুঝতে পারবে।এমন লোগো আপনি বানালেন যেটা দেখে বুঝতে সময় লাগে অনেক তাহলে সেই লোগো দর্শক গ্রহন করবে না।
আপনার লোগো মনে রাখার মতো হতে হবে – এমন লোগো ডিজাইন করতে হবে যেটা দর্শকরা মনে রাখবে, তার মানে কিন্তু এই না সেখানে অনেক কালার ব্যবহার করতে হবে, অনেক রকম স্টাইলিশ ফন্ট ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি।আপনার লোগো তখনই মানুষ মনে রাখবে যখন সেটা সিম্পল হবে কিন্তু সেটার মধ্যে একটা স্টোরি থাকবে।
লোগো স্থায়ী হতে হবে- এমন ভাবে লোগো ডিজাইন করবেন যেন সেটা সময় এর সাথে সাথে পুরানো হয়ে না যায় না, সেই কোম্পানিকে যেন দএক বছর বছর পর পর লোগো ডিজাইন করার কথা চিন্তা করতে না হয়।বিভিন্ন মার্কেট প্লেস এ দেখা যায় বায়াররা জব পোস্ট করে আগের লোগো পুরানো হয়ে গেছে নতুন করে আধুনিক লোগো বানাতে চায়।আর সেটা আগের লোগো ডিজাইনার এর জন্য খুব সুখকর হউয়ার কথা না।তাই সময় এর সাথে লোগো যেন পুরানো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
সব জায়গায় দেখতে ভাল লাগতে হবে- আপনি একটা লোগো ডিজাইন করলেন যেটা অনেক বড় করে বিল বোর্ড এ দিলে দেখতে চমৎকার লাগে আবার একদম ছোট করে বিজনেস কার্ড এ দিলে খুব ই বিশ্রী লাগে, আবার কালার অবস্থায় অনেক সুন্দর লাগে কিন্তু সাদাকালো করলে কিছুই বুঝা যায় না, এখানে ও সিম্পল লোগোর কথা চলে আসবে, আপনার লোগো ডিজাইন যখন অনেক জটিল হয়ে যায় তখন সেই লোগোর সাইজ অথবা কালার পরিবর্তন করলে অনেক কিছু বুঝা যায় না।
বিসয়বস্তুর সাথে মিলতে হবে- আপনি যে কোম্পানির জন্য লোগো করছেন অথবা কোন ইভেন্ট এর জন্য লোগো করছেন সেই কোম্পানির যে উদ্দেশ্য অথবা সেই ইভেন্ট এর যে বিষয় তার সাথে মিল রেখে অবশ্যই লোগো বানাতে হবে।যেমন একটা বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করে এরকম কোন স্টোর এর লোগো বানাচ্ছেন সেখানে আপনাকে Childish font ব্যবহার করতে হবে এবং কালার ও হতে হবে অনেক ব্রাইট।
ঠিক করুন আপনার লোগো ডিজাইনএর প্রসেস
আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি লোগো ডিজাইন কিভাবে করবেন।কোন স্টেপ এর পর কোন স্টেপ আসবে।শুধু কম্পিউটার এ সফটওয়্যার নিয়ে বসে গেলে ই তো লোগো হয় না আরও অনেক ব্যাপার আছে যেগুলি আপনাকে মানতে হবে।এক একজন ডিজাইনার এর ডিজাইন প্রসেস এক এক রকম হতে পারে কিন্তু কিছু বেসিক ব্যাপার আছে যেগুলি সব ডিজাইনার ই মেনে চলে।যেমন
বায়ার এর কাছ থেকে ভাল করে জেনে নিন- বায়ার এর কাছ থেকে ভাল করে জেনে নিতে হবে, সে কি রকম চায়, তার কোম্পানির কি উদ্দেশ্য, তার কোন কালার পছন্দ আছে কিনা, নিজের কোন আইডিয়া আছে কিনা এই বাপারগুলি ভাল মতো জেনে নিতে হবে, যত ছোট ব্যাপার এই হোক আপনি সম্পুরনভাবে ক্লিয়ার হয়ে ডিজাইন করতে বসবেন।
গবেষণা করে নিন – আপনি যখন বায়ার এর কাছে জানতে চাইবেন তখন হয়তো সে তাদের ওয়েবসাইট এর ঠিকানা আপনাকে দিয়ে দিবে এবং বলবে এখান থেকে সব কিছু বের করে নেয়ার জন্য।তখন আপনি সেই ওয়েবসাইট থেকে বের করে নিবেন, কোন ধরনের কোম্পানি, কি কাজ করে, মুল উদ্দেশ্য কি, এরপর আপনি ওরকম এ অন্য কোন ওয়েবসাইট এ ঢুকবেন অথবা গুগলে সার্চ দিবেন বুঝার চেষ্টা করবেন বাকিরা কিভাবে চিন্তা করেছে, যেহেতু এক ই ধরন এর কোম্পানি তাই আপনি ধারনা নিতে ই পারেন।এখানে কপি করা যাবে না, ধারনা নিয়ে নিজের মতো বানাতে হবে।
কাগজে কলমে একে নিন- বায়ার এর চাহিদা এবং আপনি গবেষণা করার পর কি বে হল সেগুলি কাগজে ড্রাফট করে ফেলুন।
একটু বিরতি নিন – কাগজে একে ফেলার পর ডিজাইন করার আগে একটু বিরতি নিন কারন বিরতি নিলে ডিজাইন এর আইডিয়াটা আরও বেশি পরিপক্ক হবে যেটা প্রোফেসনাল লোগো ডিজাইন এর জন্য অনেক দরকার।
বায়ারকে লোগো দেখান- এরপর ডিজাইন করুন, সব কাজ ই কিন্তু হয়ে গেল শুধু ডিজাইন বাকি, তাহলে দেখলেন তো কম্পিউটার এ বসে ডিজাইন করা কতো পরের বিষয় অন্তত লোগো ডিজাইন এর ক্ষেত্রে।একটা কপি না করে কয়েকটা কপি করুন তারপর বায়ারকে দেখান, বায়ার কি বলে সেগুলি শুনুন তারপর ভুলগুলি ঠিক করুন
আপনার লোগোর দাম ঠিক করুন
লোগো দাম কি রকম হবে, খুব ই কমন একটা প্রশ্ন।উত্তর দেয়া ও কঠিন।আসলে আপনাকে বুঝতে হবে ব্যাপারটি।এইটা নরভর করে আপনি বায়ারকে কতো গুলি আলাদা আলাদা ডিজাইন এর লোগোর কপি দিলেন, কতগুলি রিভিশন লাগল, কি পরিমান গবেষণা করা লাগছে এবং সব থেকে বড় কথা হল সেই কোম্পানির বিজনেস কতো বড় অথবা ছোট।তাই কিছু প্রশ্ন করুন নিজেকে দেখবেন উত্তর পেয়ে যাবেন সহজে ই যেমন
- কি ধরন এর লোগো জন্য আপনি মূল্য নির্ধারণ করছেন
- গ্রাফিক ডিজাইন এবমগ লোগো ডিজাইন এর ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা কতো দিনের
- অন্যরা এরকম ডিজাইন করতে কিরকম দাম নেয়
- আপনি কি ঘন্টা হিসেবে টাকা নিবেন নাকি প্রোজেক্ট হিসেবে
- আপনার লোগোটি ডিজাইন করতে কি রকম সময় লেগেছে
- লোগোটা ডিজাইন করতে গিয়ে আপনার কোন খরচ হয়েছে কিনা
- যে কোম্পানির জন্য লোগো ডিজাইন করেছেন সেটি কতো বড় অথবা ছোট
- আপনার বায়ার কি কততুকু আপনাকে দিতে পারে ধারনা করুন
এই ব্যাপাগুলি নিয়ে চিন্তা করে, উত্তরগুলি কি রকম আসে সেটা দেখার পর আপনি একটা মূল্য ঠিক করবেন।
অন্যদের কাছ থেকে শিখুন
অন্য কোন কোম্পানি কি রকম চিন্তা করে লোগো তৈরি করেছে এবং সফল হয়েছে সেটা জানার এবং বুঝার চেস্টা করুন তাহলে আপনি যখন কাজ করবেন তখন বাপারগুলি আপনার চিন্তায় থাকবে।উদাহারনশরুপ উপরের নাইক কোম্পানির লোগোটা দেখুন যেটা তৈরি হয়েছে ১৯৭১ সাল এ আর যে তৈরি করছে তার নাম হল Caroline Davidson. এই লোগো একটা রোল মদেল হিসেবে কাজ করে যে একটা লোগো কতটা শক্তিশালি, স্মরণীয় হতে পারে কোন রকম কালার ছাড়াই এবং আপনি এইটা যে সাইজ ই করুন দেখতে খারাপ লাগবে না।নাইক কোম্পানির লোগো অনেক বিখ্যাত লোগোর মধ্যে অন্যতম কিত্নু এটা ছারাও আরও অনেক বিখ্যাত লোগো আছে, চিন্তা করুন তারা লোগোর মধ্যে কোন বাপারগুলি নিয়ে আশা চেষ্টা করেছে এবং সেই বাপারগুলি লোগোকে এবং কোম্পানিকে কিভাবে সফল করেছে।দেখবেন আপনি ও আপনার ডিজাইন এরকম ভাবে করতে পারবেন।
এই ওয়েবসাইট এ অনেক ধরনের মানসম্মত লোগো দেখতে পাবেন যেখান থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
লোগোতে কমন জিনিশ ব্যবহার করবেন না
আইডিয়ার জন্য লাইট বাল্ব, আলোচনা বুঝাতে speech bubbles,আন্তর্জাতিক বুঝাতে গ্লোব এগুলি অনেক ধরনের লোগোতে ব্যবহার করা হয়, তাহলে আপনার ডিজাইন কিভাবে অন্যদের থেকে আলাদা হবে।তাই এই ধরনের শেপ ব্যবহার না করে নিজেরদের মতো করে কিছু বানান দেখবেন সেটা অনেকদিন পর্যন্ত তিকে থাকবে।আর একটা ব্যাপার প্রায় ই বলা হয় সেটা হচ্ছে অন্য কারো ডিজাইন কপি করবে না, কিন্তু এইটা কি বলা হয় যখন ডিজাইনার কোন ডিজাইন দেখে, কম্পিউটার এ বসে সেই ডিজাইন ই করে শুধু কালার পরিবর্তন করে দেয়, ফন্ট পরিবর্তন করে দেয় আর বলে এটা আমার নিজের আইডিয়া। এইটা অবশ্যই ঠিক না, আর একদিন হয়তো আপনি ধরা পড়ে যাবেন কারো কাছে আর সবাই বুঝে যাবে আইডিয়াটা আপনার না।অন্য কারো।
আমার নিজের একটা ছোট ব্লগ সাইট আছে, আপনারা চাইলে সেখান থেকে ও ঘুরে আসতে পারেন।